কলিঙ্গ যুদ্ধ - সম্রাট অশোক

সম্রাট অশোক [জন্ম ৩০৪ খ্রীষ্টপূর্ব, শাসনকাল ২৯৮-২৭২ খ্রীষ্টপূর্ব; প্রাকৃত রাজকীয় উপাধি;'ধর্মা' ও 'দেবতাপ্রিয় প্রিয়দর্শী' Devanampriya Priyadarsi] : বিন্দুসারের মৃত্যুর পর অশোক সম্রাট হন। তাঁকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা বলা হয়ে থাকে। অশোক বিন্দুসারের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বসম্পন্ন রাণী ধর্মার সন্তান ছিলেন। তবে এনিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ঠ মতভেদ আছে। তাঁর চেয়ে বয়েসে বড় বিন্দুসারের অনেকগুলো ভাই ছিল, একমাত্র বিদ্দাশোকই ছিল তাঁর চেয়ে কনিষ্ঠ। কিন্তু পরাক্রম ও বুদ্ধির জন্য তিনিই সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের [Chandragupta Morja] সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন। অশোকের সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্ত্বতার জন্য মৌর্য সেনাবাহিনীর উচ্চপদে আসীন ছিলেন ও সেনাবাহিনীর এক বড় অংশের পরিচালক ছিলেন। অশোকের এই শক্তি বৃদ্ধি বাকী ভাইদের ঈর্ষান্বিত করে তোলে; সুসীম, বিন্দুসারের [Bindusara] জেষ্ঠ পুত্র তার উত্তরিধীকার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে সুসীমের [Sushima] অপদার্থতায় তক্ষশীলায় [Taxila / Taksashila] বিদ্রোহ দেখা দেয়, তখন তারই চক্রান্তে বিন্দুসার অশোককে সেখানে বিদ্রোহে দমনে পাঠান। অশোক আসার খবরে সেনাবাহিনী উজ্জবিত হয়ে ওঠে, পরে বিদ্রোহী সেনারাও তাঁর আগমনে বিদ্রোহের পথ ত্যাগ করে ও বিনাযুদ্ধে অশোক বিদ্রোহ দমন করে ফেলেন। যখন বিন্দুসারের অসুস্হতার খবর ছড়িয়ে পড়ে তখন অশোক মগধের বাইরে ছিলেন। এরপর বিন্দুসারের পুত্রদের মধ্যে সিংহাসনের দখল নিয়ে রক্তাক্ত দ্বন্ধ শুরু হ্য়। লোকশ্রতি অনুসারে অশোক তাদের ভাইদের হত্যা করে সিংহাসনের বাধা দূর করতে সক্ষম হন।



রাজা হওয়ার পরই অশোক সাম্রাজ্য বিস্তারে মনযোগী হন। তিনি পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশ, পশ্চিমে ইরান ও আফগানিস্হান, উত্তরে পামীর গ্রন্থি থেকে প্রায় সমগ্র দক্ষিণভারত নিজের সাম্রাজ্যভূক্ত করেন। এরপর অশোক কলিঙ্গ প্রজাতন্ত্র দখলে উদ্যোগী হন এবং কলিঙ্গ যুদ্দের [Kalinga War] পরিকল্পনা করেন।খ্রীষ্টপূর্ব ২৬১ (মতান্তরে খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৩) দয়া নদীর ধারে ধৌলি পাহাড়ের কাছে ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। দু'দলের মধ্যে প্রচুর হতাহতের মধ্যে অশোক কলিঙ্গজয় করেন। এই যুদ্ধে কলিঙ্গবাহিনীর ১,০০,০০০ সেনা ও মৌর্য সেনাবাহিনীর ১০,০০০ সেনা নিহত হয় ও অসংখ্য নর-নারী আহত হয়। যুদ্ধের এই বীভত্সতা সম্রাট অশোককে বিষাদগ্রস্থ করে তোলে। তিনি যুদ্ধের পথত্যাগ করে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন ও অহিংসার পথে সাম্রাজ্য পরিচালনের নীতি গ্রহণ করেন। এরপর অশোক দেশে ও বিদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে উদ্যোগী হন। এই উদেশ্যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠান। তাঁর পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে শ্রীলংকা পাঠান। এছাড়া তিনি কাশ্মীর, গান্ধার, ভানাভাসী, কোংকন, মহারাষ্ট্র, আফগানিস্তান [Vacktria], নেপাল, থাইল্যান্ড, ব্রহ্মদেশ, লাক্ষাদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেও বৌদ্ধধর্ম প্রচার করান।

Kalinga War - Emperor Ashoka Morja vs. Rani Padmavati